নদীর বুকে ভাসমান ‘ছাতির চর’: দুর্ভোগ পেরিয়ে পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বীপ

নিকলি উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীবেষ্টিত এক বিস্ময়কর দ্বীপগ্রামের নাম ‘ছাতির চর’। কিশোরগঞ্জ জেলার এই নদীগ্রাম যেন এক নিসর্গময় চিত্রপট। প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস এই বিচ্ছিন্ন জনপদে, যেখানে বছরের পর বছর নদীভাঙনের সঙ্গে চলেছে টিকে থাকার লড়াই।

কিন্তু সময় বদলেছে। সরকারিভাবে নির্মিত শক্তিশালী বেরিবাঁধ এখন ছাতির চরকে রক্ষা করছে আগ্রাসী স্রোতের হাত থেকে। শুধু রক্ষা নয়—এই বাঁধ বদলে দিয়েছে গোটা গ্রামের চেহারা। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন এই দ্বীপগ্রাম পরিণত হয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন ভোরে।

চারদিকে নদী আর মাঝখানে সবুজে ঘেরা জনপদ—প্রকৃতির এমন মোহনীয় সৌন্দর্য পর্যটকদের টানছে দূরদূরান্ত থেকে। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর ভিড়। কেউ আসছে ছবি তুলতে, কেউবা নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির কোলে কিছুটা প্রশান্তি খুঁজতে।

শিক্ষা ও প্রবাসজীবনেও ছাতির চর এগিয়ে রয়েছে। এই ছোট্ট গ্রামে রয়েছে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আরও একাধিক মসজিদ ও মাদ্রাসা। গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত, যা একটি প্রত্যন্ত এলাকার জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এখানকার অধিকাংশ যুবক জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসে অবস্থান করছেন, যাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিতে রেখেছে দৃশ্যমান প্রভাব।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “একসময় এই চর শুনলেই মানুষ ভয় পেত। এখন তারা আসে আনন্দ খুঁজতে।”
তাঁদের প্রত্যাশা—সরকার বা বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো গড়ে উঠলে ‘ছাতির চর’ হয়ে উঠতে পারে কিশোরগঞ্জের অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য।

‘ছাতির চর’ এখন শুধুই একটি চর নয়—এটি উন্নয়ন, শিক্ষা, প্রবাসজীবন ও সম্ভাবনার এক জীবন্ত গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *